আইসিসে যোগ দেওয়া মানুষের সংখ্যা দেখে আমি সত্যিই অবাক হই। অচেনা ভাষা আর অচেনা সংস্কৃতির অচেনা দেশে, ধুসর মরুভূমিতে, অস্ত্র হাতে নিয়ে ঘুরবে,আর উগ্র সালাফি আদর্শে তৈরি আইসিসে বিশ্বাস-না-করা মানুষদের, সে মুসলিম হোক, অমুসলিম হোক, নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করবে, যৌনদাসির সঙ্গে রাত কাটাবে, মানবে না গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ধর্ম-নিরপেক্ষতা, মানবে না শরিয়া আইন ছাড়া অন্য কোনও আইন, গুঁড়িয়ে দেবে প্রাচীন সভ্যতা, ত্যাগ করবে স্বজন-বন্ধু– কে চায় এমন ভয়াবহ জীবন? কে আকৃষ্ট হয় এসবে? অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, পৃথিবীর ১১১টি দেশের অন্তত ৪১ হাজার ৪৯০ জন মানুষ এসবে আকৃষ্ট হয়েছে। তারা ইরাকে আর সিরিয়ায় গিয়ে আইসিসে যোগ দিয়েছে। ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্যের নাগরিকই যোগ দিয়েছে প্রায় ৬ হাজার। বর্বরতা, নৃশংসতা হয়তো মানুষের রক্তেই। তা না হলে এত মানুষ কেন খুন করার জন্য উন্মাদ হয়েছে! এত লোক কী করে অসম্ভব এক স্বপ্নও দেখে ফেলেছে – পৃথিবীর সব মানুষ রাতারাতি সালাফি বা ওয়াহাবি মুসলমান হয়ে উঠবে, আর পৃথিবীর শাসনভার থাকবে এক খলিফার ওপর!
অসম্ভবকে সম্ভব করার স্বপ্ন অনেকেই দেখে। সব স্বপ্ন তো দোষের নয়। ইউটোপিয়ায় বিশ্বাস করা মানুষ অসম্ভব স্বপ্ন দেখে। তারা কিন্তু বর্বরতায় বিশ্বাস করে না। বর্বরতা আর খুন খারাবির মধ্য দিয়ে যারা নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে চায়, তাদের নিয়েই সমস্যা। হিটলারের স্বপ্ন ছিল, স্টালিন, পল পটের ছিল। তাদের স্বপ্ন মানুষকে অকথ্য অত্যাচার, অমানুষিক নির্যাতন আর নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা ছাড়া পূরণ হতো না। এ যুগের মাওবাদীরা মানুষ খুন করছে স্বপ্ন পূরণের জন্য। যাদের খুন করছে তারাও সাধারণ মানুষ। এতে সত্যিই কি মাওবাদিদের কোনও লাভ হচ্ছে? আইসিসও তাই। মানুষ মেরে তারা পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় নিতে চায়। এক পাল খুনী আর বর্বর পুরুষ পৃথিবীতে বাস করবে শুধু, মেয়েদের স্বাধীনতা বলে কিছু থাকবে না। মেয়েরা পুরুষের ক্রীতদাসি বা যৌনদাসি হবে। এটি ওদের স্বপ্ন হতে পারে, কিন্তু যে কোনও সুস্থ মানুষের জন্য এ নিশ্চিতই দুঃস্বপ্ন।
আইসিসের পতন নিশ্চিত হওয়ার পর অনেক সন্ত্রাসীই যার যার দেশে ফিরে গেছে। ১৮০০জন সন্ত্রাসী ফিরে গেছে ইউরোপে। অবশ্য এখনও ইরাক ও সিরিয়ায় ১৫/১৬ হাজার সন্ত্রাসি রয়েছে। এরাও একসময় নিশ্চিহ্ন হবে।এটা ঠিক, অনেকে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে, আইসিসের মতো বর্বর দলের সংগে ভেড়াটা যে তাদের উচিত হয়নি,সেটা বোধগম্য হয়েছে অনেকের। আইসিস যে সত্যিকার শান্তির ইসলাম নয়, বরং অশান্তি আর অস্থিরতার ইসলাম, সেটা অনুধাবন করতে পেরেছে। সেটা কিন্তু বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত শামিমা বেগমের এখনও বোধগম্য হয়নি, এখনও তার ধর্মের ঘোর কাটেনি। ডাস্টবিনে মানুষের কাটা মুণ্ডু দেখেও যে তার কোনও অনুশোচনা বা অনুতাপ হয়নি, সেটা সে আজও বেশ গর্ব করে বলে। আইসিসের হত্যার রাজনীতি নিয়ে তার কোনও সংশয় নেই, আশংকা নেই। সে বরং মনে করে এটিই সত্যিকারের ইসলাম। তার ভাষ্যে, ইসলাম যদি বলে বিধর্মীদের মুণ্ডু কেটে ফেলা উচিত, তাহলে কেটেই ফেলা উচিত, এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। কতটা মগজধোলাই হলে মানুষ এমন অকম্পিত দ্বিধাহীন কণ্ঠে বর্বরতার পক্ষে দাঁড়াতে পারে! শামিমা অনুতপ্ত তো নয়ই, বরং গর্বিত কণ্ঠেই বলেছে, আইসিসে যোগ দিয়ে সে ভুল করেনি। চোখের সামনে দুই সন্তানের মৃত্যু হলো, তারপরও তার একবারও আক্ষেপ হয় না কেন সে সিরিয়া এসেছিল। সে এখনও বিশ্বাস করে আইসিসের আদর্শে, আইসিসের ঘাঁটি যারা বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছে, দোষ সে তাদেরই দেয়।
যুক্তরাজ্যে তার ফিরে যেতে চাওয়ার একমাত্র কারণ তার পুত্র যেন বেঁচে থাকে, দুই সন্তান হারানোর পর তার এই আকুতি। পুত্রটি তার এবং আইসিসের এক ওলন্দাজ সন্ত্রাসীর সন্তান। উগ্র সালাফি আদর্শে বিশ্বাস করা শামিমা কেন সালাফিদের সৌদি আরবে আশ্রয় চাইছে না, তা আমি বুঝতে পারছি না। এত এত নিরীহ নিরপরাধ অমুসলিম খুন করার পরও, অমুসলিমদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করার পরও বাস করার জন্য তারা সেই অমুসলিমদের দেশকেই বেছে নেয়।কী ভীষণ বৈপরীত্য তাদের কথায় এবং কাজে! যুক্তরাজ্য শামিমার নাগরিকত্ব বাতিল করার পর সে এখন তার স্বামীর দেশ নেদারল্যাণ্ডে যাওয়ার চেষ্টা করবে, নিজেই বলেছে। যদি নেদারল্যান্ডও তাকে অনুমতি না দেয়,তাহলে? তাহলেও কি সে বলবে না আইসিসে যোগ দিয়ে সে ভুল করেছিল? শামিমা তার করুণ পরিণতির জন্য নিজেকে নয় বরং যুক্তরাজ্যকেই দোষ দিচ্ছে, দোষ দিচ্ছে মিত্রশক্তিকে যারা আইসিসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। আমি কিন্তু দোষ দিই শামিমার মা বাবাকে, যারা ওর মগজে জন্মের পর থেকে ধর্ম ঢুকিয়ে ঢুকিয়ে যুক্তিবুদ্ধি লোপ পাইয়ে দিয়েছে, ওকে ধর্মান্ধ বানিয়েছে। ধর্মান্ধদের মগজ ধর্মের নামে সন্ত্রাস খুব সহজেই মেনে নেয়।
উদারপন্থিরা দাবি করছে ‘শামিমাকে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে নেওয়া হোক।তার সন্তান তো কোনও দোষ করেনি।তাছাড়া শামিমা সন্ত্রাসী হয়েছে যুক্তরাজ্যে বসেই, এই দায় যুক্তরাজ্যকেই নিতে হবে। ১৫ বছর বয়সের কিশোরী ভুল তো করতেই পারে। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসনে রাখা হোক, অথবা তার বিচার হোক, জেল হলে জেল হোক’। ডানপন্থীরা বলছে ‘আইসিসের সব সন্ত্রাসীকে মেরে ফেলা হোক, ওদের বাঁচিয়ে রাখা ঝুঁকির ব্যাপার। তাছাড়া কোনও দেশই তাদের ফেরত নেবে না’। বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত হলেও বাংলাদেশ শামিমাকে নেবে না। বাংলাদেশে জঙ্গির অভাব নেই, নতুন জঙ্গিকে জায়গা দেওয়ার জায়গা বাংলাদেশের নেউ। অগত্যা শামিমার কী হবে, তা শামিমা এবং শামিমার শুভাকাংখী যারা আছে, তারা বুঝবে। কেউ কেউ বলে এভাবে সন্ত্রাসীদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হলে ওদের ক্ষোভ প্রচণ্ড আকার ধারণ করবে, আগুন আরো জ্বলবে, সন্ত্রাস আরও বাড়বে। কিন্তু অন্যরা কী শিখবে যদি সন্ত্রাসীদের ফিরিয়ে নেওয়া হয়? শিখবে সন্ত্রাসী হওয়ার পরও আরাম আয়েশ বাতিল হয় না। সমস্যায় পড়লে দিব্যি সভ্য দুনিয়ায় ফেরত আসা যায়। দক্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে ইউরোপ-আমেরিকায় সন্ত্রাস করার সুযোগও মেলে।
শামিমা যুক্তরাজ্যে ফিরে গেলে, আমার ভয় হয়, সে হয়তো বোরখার আড়ালে বোমা নিয়ে ভিড়ের রাস্তায় বা মেট্রো রেলে যাবে অমুসলিমদের খুন করতে। মগজধোলাই খুব সাংঘাতিক ক্ষতিকর জিনিস। ধোলাই হওয়া মগজকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব। খুব দ্রুত মানুষ নরমপন্থা থেকে চরমপন্থায় চলে যেতে পারে, কিন্তু চরমপন্থা থেকে নরমপন্থায় আসা কারও জন্য সহজ নয়। তাহলে কি চরম ডানপন্থীদের মতো বলবো, সন্ত্রাসীদের বা জিহাদিদের মেরে ফেলো?না, তা বলবো না। সকলেরই বেঁচে থাকার অধিকার আছে। আমি বরং চাইছি শামিমা তার আদর্শে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিশ্বাস করতে চাইলে করুক। তবে বিধর্মীদের প্রতি তীব্র ঘৃণা নিয়ে বিধর্মীদের দেশ যুক্তরাজ্যে যাওয়াটা নিরাপদ নয়। এমনকী যুক্তরাজ্যের জেলও শামিমার জন্য নিরাপদ নয়। বিধর্মীদের প্রতি তার মনোভাব যেহেতু জানাজানি হয়ে গেছে, অধিকাংশ বিধর্মীই তাকে অবিশ্বাস করবে, ঘৃণা করবে, এমনকী তাকে ভয়ও পাবে। এসব শামিমাকে প্রতিশোধপরায়ণ করে তুলবে আরও, সে আরও বড় সন্ত্রাসী হয়ে উঠবে। এটা তার জন্য তো ভালো নয়ই, যুক্তরাজ্যের জন্যও ভালো নয়। জিহাদিদের নিজের প্রতি যেমন কোনও মায়া থাকে না, অন্যের প্রতিও থাকে না। কচি কচি তরুণেরা হলি আর্টিজান ক্যাফেতে কী ঠান্ডা মাথায় মানুষের গলা কেটেছে! ওরা কি আগে কখনও মানুষের গলা কেটে হাত পাকিয়েছে? মগজধোলাই সব করিয়ে নিতে পারে, অন্যকে খুন, স্বজন বন্ধুকে খুন, নিজেকে খুন, সব।
শামিমা এবং আরও যারা আইসিস জংগি রাষ্ট্রহীন অবস্থায় ইরাকে বা সিরিয়ায় পড়ে আছে, যারা ইউরোপ আমেরিকার নাগরিকত্ব হারিয়েছে বা হারাতে যাচ্ছে, ইউরোপ বা আমেরিকায় নয়, তাদের চেষ্টা করতে হবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশে বাস করার, বিশেষ করে যেসব দেশে শরিয়া আইন বলবত আছে। ওসব দেশেই তারা মনের শান্তি সুখ সব পাবে। বোরখা পরে চলাফেরা করলে ওসব দেশে কেউ টিপ্পনি কাটবে না। ইউরোপের মতো বোরখা নিষিদ্ধ করার আইন জারি হবে না। আর আইসিস পুরুষেরাও নবীজির মতো পোশাক পরে রাস্তা ঘাটে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াতে পারবে।কেউ তাদের সন্ত্রাসী ভেবে হামলা করবে না। মুসলিম সমাজের পরিবেশে ওরা সহজে মিশে যেতে পারবে। তাই সকলে মিলে ওদের ইউরোপ আমেরিকায় ফেরত পাঠানোর পরিবর্তে শরিয়া আইনের দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করুন।
[ছবি : ইন্টারনেট থেকে নেয়া]
জাহাঙ্গীর হোসাইন
I am just a very ordinary rural Bengali. But I would like to contact you for a long time. Please, you will fulfill my wish.
Harun
I am harun,from bangladesh. I know you. I read your book
Sampa
নমস্কার মাননীয়া লেখিকা,
জানিনা এই লেখাটা আপনি পড়বেন কিনা কিংবা আপনার কাছে পৌঁছাবে কিনা। তবু বলি প্রথম আমার প্রেমিকের থেকে যে উপহার চেয়েছিলাম সেটি ”লজ্জা”। বইটি আজ থেকে পনের বছর আগে উপহার হিসেবে পাওয়া। এরপর আপনার লিখিত বহু বই যেমন ”আমার মেয়েবেলা”, ”দ্বিখন্ডী”, ”নির্বাসন”, ”ব্রহ্মপুত্রর পারে”, ”যেভাবে বাঁচি” ইত্যাদি পড়েছি।
আপনার সাহসিকতাকে প্রণাম জানাই। সর্বপোরি মানুষ হিসেবে সম্মান জানাই।
আপনার লেখা পড়ে সাহস পাই। মনে হয় জীবন একটাই তাকে যদি বাঁচতেই হয় এইভাবেই মাথা উঁচু করে বাঁচা উচিৎ।
আন্তরিকভাবেই আপনার সুস্থতা কামনা করি। যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।