• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Taslima Nasrin

The Official Website of Taslima Nasrin

  • About
    • Journey
    • All the Books
    • Banned Books
    • Book Reviews
  • Awards
  • Gallery
  • Bangla Blogs
    • Hindi Blogs
    • English Blogs

ডাক্তার মিতুর ফাঁসির দাবিতে পুরুষতন্ত্র

You are here: Home / Bangla Blogs / ডাক্তার মিতুর ফাঁসির দাবিতে পুরুষতন্ত্র
February 8, 2019 by Taslima Nasreen
ডাক্তার মিতুর ফাঁসির দাবিতে পুরুষতন্ত্র

ডাক্তার মিতুর ফাঁসির দাবিতে বাংলাদেশের ডাক্তাররা বিশাল বিশাল ব্যানার হাতে রাস্তায় নেমেছে। মিতুর ফাঁসি দাবি করছে তারা, কারণ মিতুর স্বামী, আকাশ, সেও ডাক্তার, আত্মহত্যা করেছে। মিতু তার স্বামীকে হত্যা করেছে এই প্রমাণ পাওয়া গেলে মিতুর ফাঁসি দাবি যদি করা হতো, বুঝতাম বাংলাদেশের মানুষ এখনও চোখের বদলে চোখ চায়। কিন্তু যতদূর জানি মিতু তার স্বামীকে হত্যা করেনি, অথচ তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে মানুষ। তাহলে বাংলাদেশের মানুষ কী চায়? আত্মহত্যার বদলে হত্যা? মিতুর অপরাধ, আকাশের সঙ্গে বিয়ের আগে এবং পরে সে অন্য পুরুষের সঙ্গে প্রেম করেছে, শুধু প্রেম নয়, রীতিমত যৌন সম্পর্ক করেছে। এ কারণে আকাশ বড় অসন্তুষ্ট ছিল। শুধু অসন্তুষ্ট বলবো না, রেগে আগুন হয়ে ছিল। এসময় আকাশ যদি মিতুকে খুন করতো, তাহলে কিন্তু লোকে বলতো, অমন বিশ্বাসঘাতিনী পাপিষ্ঠাকে, অমন বেশ্যাকে খুন করেছে, বেশ করেছে। কিন্তু মিতুকে খুন না করে নিজেকেই খুন করে ফেলেছে আকাশ। গলায় দড়ি দেয়নি, আর্সেনিক খায়নি, যেগুলোয় যন্ত্রণা হয়, বরং ইঞ্জেকশান নিয়েছে রক্তে, খুব সম্ভবত বেশি মাত্রার ঘুমের ওষুধ নিয়েছে, কোনও যন্ত্রণা যেন টের না পায়। অপারেশন টেবিলে অজ্ঞান করার সময় যে রকম ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে যায় মানুষ, তেমন করে ঘুমিয়ে গেছে। মৃত্যু যন্ত্রণায় ভোগেনি আকাশ। কিন্তু মিতু যেন সারাজীবন ভোগে, সেই ব্যবস্থা পাকা করে গিয়েছে। মিতুর ব্যক্তিগত মেসেজগুলো, যেমন ‘পরপুরুষ’-এর সংগে তার যৌন রসাত্মক কথাবার্তা , পরপুরুষের সঙ্গে তার অর্ধ উলঙ্গ ছবি, সবই পাবলিক করে দিয়েছে আকাশ। জানিয়ে দিয়েছে মিতু খারাপ, মিতু নষ্ট । মেরে ধরে হলেও মিতুকে দিয়ে স্বীকার করিয়ে নিয়েছে যে মিতু দুশ্চরিত্র, ব্যাভিচারী। এইসব স্বীকারোক্তির ভিডিও বাজারে ছেড়ে তবেই মরেছে আকাশ। দুঃখে কষ্টে যন্ত্রণায় কাঁদতে কাঁদতে মরেনি। হাহাকার করতে করতে, কুঁকড়ে যেতে যেতে মরেনি। ওগুলো করলে মিতুর পরকীয়ার প্রমাণ সংগ্রহ করে ফেসবুকে সেগুলো প্রকাশ করতো না, মিতুর বিরুদ্ধে বিষোদগার করতো না, মিতুর সর্বনাশ করার কূটকৌশল করতো না। মিতুকে ভালোবেসে জীবন উৎসর্গ করেনি আকাশ। ভালোবেসে মানুষ যেমন সহায় সম্পত্তি দিয়ে থুয়ে যায়, তেমন কিছুই দিয়ে থুয়ে যায়নি, বরং মিতুর পাওনা দেনমোহরের ৩৪ লাখ টাকা শোধ না করেই মরেছে। মিতু যেন মানুষের ঘৃণা পেতে পেতে, রাস্তা ঘাটে লোকের ঢিল খেতে খেতে, গালি খেতে খেতে, ঘরে বাইরে লাথি খেতে খেতে মরে। অসম্মান পেতে পেতে, অপমানিত হতে হতে যেন মরে। শান্তি বলে কিছু যেন মিতুর না জোটে। আকাশ কাঁচা কাজ করেনি। অনেকটা সেইসব বর্বর প্রতিশোধপরায়ণ লোকের মতো আকাশ, যারা বলে তোকে না মেরে মরবো না, আমাকে শান্তি দিসনি, তোকেও শান্তি দেবো না।

আমি ফেসবুকে শুধু লিখেছি আত্মহত্যা করা মানেই তুমি নিরীহ এবং নির্দোষ – তা নয়। তাতেই আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছে পুরুষতন্ত্রের নোংরা কাদায় ডোবা অন্ধ, অসভ্য, অশিক্ষিত নারীবিদ্বেষী নারীপুরুষ। তাদের ভাষ্য মিতু বেশ্যা, মিতুকে যেহেতু বেশ্যা বলে আমি গালি দিইনি, আমিও বেশ্যা। বেশ্যা শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো, ‘যে স্ত্রীলোক যৌন সহবাসের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করে’। দুর্মুখেরা বেশ্যা শব্দের অর্থও জানে না। মিতু ডাক্তার মেয়ে, সচ্ছল এবং স্বনির্ভর, সে অর্থ উপার্জন করে রোগীর চিকিৎসার বিনিময়ে , রাস্তার যে কোনও লোকের সঙ্গে যৌন সহবাসের বিনিময়ে নয়। সে প্রেমিকের সঙ্গে যৌন সহবাস করে, শুধু যৌন-আনন্দ দেবার জন্য নয়, নেবার জন্যও করে। বেশ্যাদের সম্পূর্ণ উল্টো।

আকাশ ঠিক ঠিক জানতো কী করলে মিতুকে বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি দেওয়া যায়। আকাশ যদি মিতুকে হত্যা করতো, তাহলে আকাশকে শাস্তি পেতে হতো। আকাশ জানতো সে নিজেকে হত্যা করলেই মিতু শাস্তি পাবে, যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন শাস্তি পাবে। আমার মনে হয় না বাংলাদেশে মিতুর বেঁচে থাকা সম্ভব হবে, ধর্মীয় সন্ত্রাসীরা যেমন ধর্মে অবিশ্বাসীদের পেলে কুপিয়ে মারে, তেমন পুরুষতন্ত্রের পূজারীরা পুরুষতন্ত্রে অবিশ্বাসীদের কুপিয়ে মারবে। মিতু যা করেছে, তা পুরুষতন্ত্রের বুকে ছুরি মারা ছাড়া কিছু নয়। স্বামী পরনারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করলেও, দাসির সঙ্গে, এমনকী ক্রীতদাসীর সঙ্গেও– কারো কোনও আপত্তি নেই, কারণ ধর্ম যেমন একে অনুমোদন দেয়, পুরুষতন্ত্রও দেয়। যুগে যুগে পুরুষেরা ঘরে বাইরে সর্বত্র নারীকে ভোগ করে এসেছে। তাদের জন্য শুধু প্রাচীন কালেই নয়, এ যুগেও বেশ্যালয় গড়ে দেওয়া হয়, যেন সেসব বেশ্যালয়ে গিয়ে লক্ষ লক্ষ অচেনা অজানা অসহায় মেয়েদের ধর্ষণ করতে পারে বা ভদ্র ভাষায় যৌন সম্পর্ক করতে পারে। মেয়েদের জন্য শুধু স্বামীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক বৈধ করেছে ধর্ম এবং পুরুষতন্ত্র।

মিতু সম্ভবত পুরুষদের অনুকরণ করেছে । পুরুষদের পরনারীগমন দেখে দেখে নিজেও করেছে পরপুরুষগমন। পুরুষ এই সমাজের প্রভু। প্রভুর কাছ থেকেই তার অধঃস্তনরা শেখে। মিতু ভুলে গিয়েছিল, এই সমাজে যা পুরুষের জন্য নৈতিক, তা মেয়েদের জন্য নৈতিক নয়। ধরা যাক আকাশ যৌনতায় অক্ষম, বা অপারদর্শী পুরুষ। সে কারণে মিতু সক্ষম এবং পারদর্শী পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক করেছে। এর যদি ঠিক উল্টোটা হয়, স্ত্রী যৌন সম্পর্কে অক্ষম, তাহলে কিন্তু পুরুষের পরনারীগমনকে সকলে স্বাভাবিক মনে করবে। কিন্তু স্বামী অক্ষম হলেও নারীর পরপুরুষগমনকে একটি প্রাণিও সহ্য করবে না।

সবচেয়ে ভালো হতো আকাশ এবং মিতুর যদি তালাক হয়ে যেত। ভালোবাসাহীন সংসারে তালাকের মতো জরুরি আর কিছু নেই। কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক, তালাক তখনও হয়নি। আকাশ বেঁচে থাকলে হয়তো তালাক আজ না হোক কাল হতোই। জানিনা কী ধরণের চুক্তি আকাশ এবং মিতু করেছিল। কিছু দম্পতির মধ্যে কিন্তু এমন চুক্তি হয় যে, যে কেউ বাইরে যে কারও সঙ্গে প্রেম করবে, শোবে, কিন্তু বিয়েটা ভাঙবে না। নিজেদের যৌন সম্পর্ক একঘেয়ে লাগলে কিছু দম্পতি আরেকজন যৌন সংগী ভাড়া করে এনে থ্রিসাম করে। সুতরাং একগামিতা যে সব দম্পতির কাম্য, তা নয়। আকাশের রাগ দেখে ধারণা করতে পারি তাদের চুক্তি ছিল পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার, একগামি থাকার। তাহলে দ্বিচারিতা করাটা মিতুর উচিত হয়নি। এরকম অনুচিত অনৈতিক কাজ পুরুষেরা করে বলেই কি মেয়েদের করতে হবে?

মিতুকে জেলে পাঠানো হয়েছে। মিতুর জন্য জেলও এখন আর নিরাপদ নয়। থানায়, রিমান্ডে, আদালতে, জেলে — সবখানেই মিতুর জীবন ঝুঁকিপূর্ণ। নারীবিদ্বেষী খুনীদের যে কেউ তাকে খুন করতে পারে, এমনকী পুলিশও পারে। পুলিশও তো আমাদের সমাজের লোকই, যে ডাক্তাররা মিতুর ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন করছে, যে লোকেরা মিতুকে পায়ের তলায় পিষতে চাইছে, যে লোকেরা তাকে বেশ্যা বলে ছিঃছিঃ ছুঁড়ছে, তাদের মানসিকতা তো পুলিশের মানসিকতা থেকে পৃথক নয়।

কাউকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে আইন আছে একটি। এই আইনটি এ পর্যন্ত কটা পুরুষের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হয়েছে জানা নেই, তবে মেয়েদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হলে আমি অবাক হবো না। নারীবিদ্বেষী সমাজে এমন চিত্রই স্বাভাবিক। বাংলাদেশে প্রতিদিন মেয়েরা স্বামী বা প্রেমিকের অত্যাচারে আত্মহত্যা করছে, অথবা স্বামী বা প্রেমিক দ্বারা খুন হচ্ছে। প্রতিদিন মেয়েরা, শিশু থেকে বৃদ্ধা অবধি ধর্ষণের, গণধর্ষণের শিকার হচ্ছে। প্রতিদিন মেয়েরা পুরুষের বর্বরতা, বৈষম্য, শিশু পাচার, যৌন হেনস্থা, গার্হস্থ্য হিংসে– ইত্যাদি হাজারো সমস্যায় ভুগছে। দেশে কত শত মেয়ে স্বামীর পরস্ত্রীগমন, পরকীয়া, প্রতারণা দেখছে, কত শত মেয়ে স্বামীর অবহেলা, অবজ্ঞা, অপমান সইছে, কত শত মেয়ে গলায় দড়ি দিচ্ছে। তাতে ক’টা মানুষ স্বামীদের হেনস্থা করছে? বরং স্বামীরা কিছুদিন পর বুক ফুলিয়ে নতুন একটা বিয়ে করছে, নতুন বউ ঘরে আনছে। আজ মিতু পুরুষ হলে, মিতুর কোনও অসুবিধে হতো না, মিতুকে জেলেও যেতে হতো না, মিতুর ফাঁসির দাবিও কেউ করতো না।

আকাশ আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যা করলেই সে মানুষ নিরীহ, নির্দোষ, নিরপরাধ– এমন ভাবার কোনও যুক্তি নেই। মাথায় অসুখ থাকলে অনেকে আত্মহত্যা করে। রাগে জেদে হিংসেয় ঘৃণায় হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েও কেউ কেউ আত্মহত্যা করে। কাউকে অত্যাচার নির্যাতন ক’রে, খুন ক’রে, পালানোর পথ না পেয়ে শাস্তির ভয়ে বা গ্লানিতেও আত্মহত্যা করার নজির আছে। স্ত্রী তাকে ঠকিয়েছে বলে কেউ যদি আত্মহত্যা করে, এর মানে কিন্তু এই নয় যে সে তার স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতো। আত্মগৌরব অনেক সময় এত অতিকায় হয়ে ওঠে, এতে চির ধরলে কিছু কিছু মানুষ আত্মহননের পথ বেছে নিতে দ্বিধা করে না। আকাশের হাত হয়তো নিশপিশ করছিল মিতুকে আর মিতুর প্রেমিকদের খুন করতে, কিন্তু দেশ সুদ্ধ লোক জানবে সে খুনী,দেশ সুদ্ধ লোক দেখবে তার ফাঁসি হচ্ছে, বা তাকে জেলের ভাত খেতে হচ্ছে যাবজ্জীবন ! এটিই সহ্য হয়নি। খুন করতে না পারার এই অক্ষমতাও মানুষকে আত্মহত্যা করতে ইন্ধন দেয়। যাকে আমি আমার অধীন রাখতে চেয়েছি — আমার চেয়ে ক্ষুদ্র,আমার চেয়ে তুচ্ছ, আমার চেয়ে মূর্খ না হয়ে যদি সে আমার হাতের মুঠো থেকে বেরিয়ে আমাকেই টেক্কা দেয়, বা আমাকে অবজ্ঞা করে, তাহলে এ জীবন রাখার কোনও মানে নেই। ঈর্ষা ভয়ঙ্কর হয় উঠলে কী করে মানুষ? হয় হত্যা নয় আত্মহত্যা। কেউ একজন আত্মহত্যা করেছে, সুতরাং সে খুব সৎ ছিল, সরল ছিল, মহান ছিল, মহামানব ছিল – এই ধারণাটি মস্ত ভুল ধারণা।

কুখ্যাত খুনী হিটলার আত্মহত্যা করেছিল। বহু খুনী , সন্ত্রাসী, আপরাধীই আত্মহত্যা করেছে। বিশ্বাস না হয়, ইতিহাস ঘেঁটে দেখুন। আজকাল তো ইতিহাস কেউ ঘাঁটে না। সহজ উপায় বলে দিই, গুগুল করুন, মারডারারস হু কমিটেড সুইসাইড, অথবা ক্রিমিনালস হু কমিটেড সুইসাইড। দেখুন লিস্ট কত দীর্ঘ।

Category: Bangla Blogs
Previous Post:প্রশান্ত রায়ের পিপলস বুক সোসাইটিপ্রশান্ত রায়ের পিপলস বুক সোসাইটি
Next Post:ভ্যালেন্টাইন ডে

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© 2023 · Taslima Nasrin · twitter · facebook · freethoughtblogs

Return to top