• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Taslima Nasrin

The Official Website of Taslima Nasrin

  • About
    • Journey
    • All the Books
    • Banned Books
    • Book Reviews
  • Awards
  • Gallery
  • Bangla Blogs
    • Hindi Blogs
    • English Blogs

আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে বীভৎস সব প্রথা

You are here: Home / Bangla Blogs / আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে বীভৎস সব প্রথা
February 1, 2019 by Taslima Nasreen

আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে এখনও বীভৎস সব প্রথা মানা হয়। মেয়েদের যোনি-কর্তন তো আছেই, যেন যৌনসুখ পেতে না পারে। আরেকটি হলো স্তন-নির্যাতন, যেন বড় হতে না পারে স্তন, যেন পুরুষেরা স্তন দেখে যৌন আকর্ষণ অনুভব করতে না পারে। আফ্রিকায় এসব মানা হয়, এ কোনও নতুন খবর নয় । এও আমরা জানি যে ইউরোপ আমেরিকায় বসেই আফ্রিকার অভিবাসীরা মেয়েদের যোনি-কর্তন করছে। তবে নতুন খবর হলো, যুক্তরাজ্যে এই মুহূর্তে অন্তত দশ বারোটি বালিকার শরীরে বীভৎস স্তন-নির্যাতন চলছে। লন্ডন, ইয়র্কশায়ার, এসেক্স, ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস থেকে খবর এসেছে বালিকাদের স্তনে উত্তপ্ত পাথর দিয়ে ঘর্ষণ চলছে, যেন স্তনের কোষগুলো পুড়ে যায়, ভেঙ্গে যায়, যেন স্তনের স্বাভাবিক বৃদ্ধি রোধ হয়। প্রতি সপ্তাহে অথবা দু’সপ্তাহ অন্তর অন্তর স্তনের ওপর এই যন্ত্রণাময় নির্যাতন চলে। যুক্তরাজ্যের এক নারী উন্নয়ন সংগঠন থেকে জানানো হয়েছে, দশ বারোটি স্তন-নির্যাতনের ঘটনা নতুন, কিন্তু গুনে দেখলে ও দেশে কম করে হলেও আফ্রিকাজাত ১০০০ বালিকার ওপর স্তন-নির্যাতন করা হয়েছে।

মেয়েদের ওপর পুরুষ যেন যৌন নির্যাতন করতে না পারে, তার ব্যবস্থা নিতে মেয়েদের শরীরকে পঙ্গু বানানো হয়। স্তনকে যেভাবে শিল-নোড়ায় মশলা বাটার মতো বাটা হয়, সেভাবে স্তনের বিকাশ আর স্বাভাবিক স্তনের মতো হয় না। শারীরিক ক্ষতি তো বটেই, মেয়েদের মানসিক ক্ষতিও সীমাহীন। বালিকাদের স্তনের ওপর এই নৃশংস নির্যাতন তাদের মা নানিরাই করছে। মা নানিরা বিশ্বাস করছে, এতে বালিকারা অসভ্য ধর্ষকদের কবল থেকে রক্ষা পাবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ধর্ষকদের ধর্ষণ বন্ধ করার জন্য, বা মেয়েদের বিরুদ্ধে পুরুষদের নানা রকম যৌন হেনস্থা বন্ধ করার জন্য পুরুষদের শিক্ষা দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা কোনও সমাজই কেন নেয় না, কেন মেয়েদের ওপরই চলে নিজেদের বাঁচানোর জন্য নানা রকম অদ্ভুত অস্বাভাবিক অপমানজনক ব্যবস্থা গ্রহণের চাপ। পুরুষ হাত দেবে, নজর দেবে, পুরুষ ঝাঁপিয়ে পড়বে, হামলা করবে, ধর্ষণ করবে – এরকম নানা আশংকা নিয়ে মেয়েদের ছোটবেলা থেকেই বাঁচতে হয়। তাই বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছোলেই ওড়না পর, স্তন আড়াল কর, চুল ঢেকে রাখো, উরু ঢেকে রাখো, পা ঢেকে রাখো – শুভাকাংক্ষীদের এমন উপদেশ বর্ষণ মেয়েদের জীবনকে অতিষ্ট করে তোলে। কিন্তু রীতি মেনে চলতে হয় পুরুষের ভয়ে। মেয়েরা যে খাদ্য, পুরুষেরা যে খাদক, কৈশোরে পৌঁছোবার আগেই মেয়েদের তা জানিয়ে দেওয়া হয়। আশ্চর্য, সমাজে যাদের সঙ্গে মেয়েরা ঘনিষ্ট ভাবে বাস করে, তারাই নাকি মেয়েদের শত্রু, তারাই যৌন হেনস্থা কারী, তারাই ধর্ষক, তারাই খুনী। এই রকম সমাজ কি মানুষের জন্য সামান্যও ভালো? পুরুষের জন্যও এমন কোনও সমাজ আদৌ বাসযোগ্য হতো না, যদি তাদের সর্বদা তটস্থ থাকতে হতো যে তাদের শরীরের ওপর আক্রমণ চলবে, তাদের স্তনহীনতার ওপর হামলা হবে, তাদের লিংগের উপস্থিতিকে দুমড়ে মুচড়ে ফেলা হবে, ক্ষত বিক্ষত করা হবে! কেন মেয়েদের মতো স্তন তাদের বড় নয়, তাদের লিংগ কেন অদ্ভুত, তাদের অণ্ডকোষ কেন ঝুলে থাকে, তাদের কেন দাড়ি গোঁফ গজায় – এইসব কারণে যদি ঝাঁপিয়ে পড়তো তাদেরই সংগে বাস করা তাদেরই লোক, পুরুষেরা যাদের সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে নিজেদের লোক বলে? এমনতরো সমাজকে নিশ্চয়ই পুরুষেরা বলতো, এ সমাজ বাসযোগ্য নয়। তাহলে মেয়েদের অবস্থাটা অনুমান করে পুরুষেরা বুঝুক, তারা যে সমাজ তৈরি করেছে, এই সমাজও মেয়েদের জন্য বাসযোগ্য নয় মোটেও।

আমি মানুষ হয়ে জন্মেছি। কেন আমাকে আমার শরীরের স্বাভাবিক অংগের জন্য লজ্জা পেতে হবে, ভয় পেতে হবে। কেন পুরুষের ভয়ে স্তনকে পিষে ফেলতে হবে, কেন শিশুকালেই যোনি কেটে ফেলতে হবে, যোনিমুখ সেলাই করে বন্ধ করে দিতে হবে, যেন কোনও যৌনসুখ না বুঝি, যেন স্বামীই সেলাইয়ের সুতো খুলে প্রথম ভোগ করে আমাকে। মেয়ের শরীর বলে শৈশব থেকেই কেন ভুগতে হবে আমাকে! সারাটা জীবনই তো মেয়ে হওয়ার মূল্য দিয়ে দিয়ে যেতে হয়! শরীরে চুল কেন, চুল ঢেকে রাখো, মুখ কেন, মুখ ঢেকে রাখো, স্তন কেন, স্তন ঢেকে রাখো, কোমর কেন, কোমর ঢেকে রাখো, নিতম্ব কেন, নিতম্ব ঢেকে রাখো, যোনি কেন,যোনি হেফাজত করো, উরু কেন, উরু ঢেকে রাখো, পা কেন, পা ঢাকো। মেয়েদের মাথার চুল থেকে পায়ের নখ অবধিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে নারীবিদ্বেষী সমাজ।

মেয়েদের স্তন উত্তপ্ত পাথর দিয়ে ডলে, ঘসে, পিষে যে স্থবির করে ফেলা হয়, এই প্রক্রিয়াকে ইংরেজিতে ‘ব্রেস্ট আয়রনিং’ বলা হয়। বাংলায় এর অনুবাদ, স্তন ইস্ত্রি করা। আমরা কাপড় ইস্ত্রি করি। এবার স্তনেরও যে ইস্ত্রি হয়, তা জানুক মানুষ। এত যে ধর্ষণ করে পুরুষ, তাদের পুরুষাংগকে কিন্তু শাস্তি স্বরূপ ইস্ত্রি করে গলিয়ে ফেলা হয় না। কিন্তু স্তন নিয়ে মেয়েরা কোনও অন্যায় না করলেও, পুরুষেরা স্তনের উপস্থিতি দেখে অন্যায় করে বলে মেয়েদের স্তনকে মেয়েরাই গলিয়ে ফেলছে, অনুপস্থিত করে ফেলছে। এ কিন্তু মেয়েদের সুবিধের জন্য নয়। বরং অন্য পুরুষের সুবিধের জন্য। শৈশব- কৈশোরে যদি একটি মেয়ে ধর্ষণ থেকে বা নানা রকম যৌন হেনস্থা থেকে বাঁচে, তাহলে যে পুরুষটি মেয়েটিকে বিয়ে করবে, সে একটি অনাঘ্রাতা শরীর পাবে, কুমারী শরীর পাবে, সে শরীরকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে সে একা ভোগ করবে, এই হলো স্তন ইস্ত্রি করার এবং যোনিদ্বার বন্ধ করার, বা ভগাংকুর কেটে ফেলার রীতিগুলোর মূল উদ্দেশ্য। পুরুষকে যৌনানন্দ দেওয়াটাই আসল কাজ। একটি পুরুষের ভোগের জন্য শরীরকে অক্ষত রাখতে হবে মেয়েদের। সুতরাং অক্ষত রাখার প্রাচীন সব প্রথা এখনও বহাল আছে, আফ্রিকাতে তো আছেই, এশিয়াতেও আছে। আফ্রিকার, এশিয়ার লোকগুলো পৃথিবীর যে প্রান্তেই বাস করতে যায়, সেখানে সংগে করে নিয়ে যায় নিজেদের প্রথা, সে প্রথা যতই মানবতাবিরোধী হোক।

নারীবিদ্বেষ ভ্রমণ করছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। নারীবিদ্বেষের বিশ্বায়ন চলছে। সভ্য দেশগুলোয় অসভ্য দেশের অসভ্যতা ঢুকে যাচ্ছে। অসভ্য দেশে কিন্তু সভ্য দেশের মানবাধিকার, নারীর সমানাধিকার, গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা কিছুই ঢুকছে না। গণতন্ত্র বলে যা দাবি করা হয়, তা সত্যিকার গণতন্ত্র নয়। মানবাধিকার, নারীর সমানাধিকার ইত্যাদি সম্পর্কে মানুষকে ধারণাই দেওয়া হয় না। কেউ যদি ধারণা দিতে চায়, তাহলে নানা রকম আইনের প্যাঁচে তাকে ফেলে তার মত প্রকাশের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। প্রাচ্যের চিত্রটা এরকমই। পাশ্চাত্যের নারী পুরুষ মানবাধিকারের জন্য, নারীর সমান অধিকারের জন্য দীর্ঘ দীর্ঘ কাল সংগ্রাম করে যে সভ্য সমাজ নির্মাণ করেছে, সেই সমাজকে কলুষিত করছে যোনি কর্তন আর স্তন নির্যাতনের রীতি, সে সমাজকে বাক রুদ্ধ করে দিচ্ছে বোরখা নিকাবের আগমন।

পশ্চিমের বেশ কিছু মেয়ে অভিবাসীদের ওপর আকৃষ্ট হয়ে তাদের সঙ্গী হিসেবে বরণ করছে। এক সমাজে বাস করলে মেলা মেশা হয়, মেলা মেশা হলে ভালোবাসা জন্মায়। পশ্চিমের মেয়েরাও প্রাচ্যের পুরুষের সংস্পর্ষে এসে হিজাব বোরখা গায়ে চাপাচ্ছে। জানিনা কোনও একদিন হয়তো যুক্তি বুদ্ধি এমনই লোপ পাবে যে চূড়ান্ত নারী বিদ্বেষী যোনি কর্তনে বা স্তন নির্যাতনকেও ওরা সমর্থন করবে। বামপন্থীরা তো কবে থেকেই এই বলে উদারতা দেখাচ্ছে যে সব সম্প্রদায়ের সংস্কৃতিকেই সমান মর্যাদা দিতে হবে, এমনকী হিজাব বোরখার সংস্কৃতিকে, এমনকী যোনি কর্তনের সংস্কৃতিকে। আমরা কি এখনও স্বীকার করবো না যে সব সংস্কৃতি সমান মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য নয়? একটি সংস্কৃতি নাচ গানের, আরেকটি সংস্কৃতি স্তন-নির্যাতনের, এই দুই সংস্কৃতি কি সমান মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য? নারী বিরোধী সংস্কৃতিকে কিছু নারী বিরোধী লোক এখনও পালন করছে বলে সেই সংস্কৃতিকে মর্যাদা দেব কেন? বরং সেই সংস্কৃতি নিষিদ্ধ করার জন্য আন্দোলন করবো। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না অধিকাংশ সম্প্রদায়ের অধিকাংশ ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিই নারী বিদ্বেষে ভরপুর। সভ্য হতে গেলে নারীর সমানাধিকারে আমাদের বিশ্বাস করতেই হবে, সভ্য হতে গেলে নারী বিরোধী সংস্কৃতিকে নিষিদ্ধ করা ছাড়া কোনও উপায় নেই।

Category: Bangla Blogs
Previous Post:আমাদের অঞ্চল সভ্য নয়
Next Post:প্রশান্ত রায়ের পিপলস বুক সোসাইটিপ্রশান্ত রায়ের পিপলস বুক সোসাইটি

Reader Interactions

Comments

  1. Fahid Sourav

    June 5, 2020 at 3:28 pm

    সত্যিই এটা অনেক দুঃখজনক ব্যাপার। এটা অন্যায়, মেয়েদের জন্য কষ্টকর। এবং এটা সমস্ত পুরুষ জাতির জন্য কলংক।

    Reply

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© 2023 · Taslima Nasrin · twitter · facebook · freethoughtblogs

Return to top