• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Taslima Nasrin

The Official Website of Taslima Nasrin

  • About
    • Journey
    • All the Books
    • Banned Books
    • Book Reviews
  • Awards
  • Gallery
  • Bangla Blogs
    • Hindi Blogs
    • English Blogs

বিশ্ব হিজাব দিবস

You are here: Home / Bangla Blogs / বিশ্ব হিজাব দিবস
January 26, 2019 by Taslima Nasreen
বিশ্ব হিজাব দিবস

মেয়েদের নিয়ে ঝামেলাই বটে। ফেব্রুয়ারির এক তারিখে শুরু হচ্ছে বিশ্ব হিজাব দিবস। কোনও শরীরে কোনও কাপড়ের টুকরো পরার এবং না পরার স্বাধীনতা নিয়ে আন্দোলন সম্ভবত তখনই হয়, যখন শরীরটা মেয়েদের। আমি কোনওদিন পুরুষদের দেখিনি টুপি পরার জন্য বা কেফিয়ে বা ঘুটরা পরার জন্য আন্দোলন করতে, বা না পরার অধিকারের জন্য পথে নামতে। ইরানে প্রতিটি মেয়ের ওপর হিজাব চাপিয়ে দেওয়ার আইন যখন হচ্ছে, লক্ষ লক্ষ ইরানি মেয়ে পথে নেমেছিল হিজাব না পরার অধিকার চেয়ে। ইরানের ধর্মীয় শাসক মেয়েদের সেই অধিকার দেননি।

কিছু মেয়ে চায় হিজাব পরতে, তারা হিজাব পরে। মুশকিল হলো কিছু মেয়ে চায় না হিজাব পরতে, কিন্তু তাদেরও হিজাব পরতে বাধ্য করা হয় । হিজাব না পরলে তাদের শাস্তি পেতে হয়। এইতো কয়েক মাস আগে বেশ ক’জন ইরানি মেয়ে ইরানের ফুটপাতে, যেন সকলে দেখে এমন উঁচুতে দাঁড়িয়ে, জনতার চোখের সামনে, দিনের ঝকঝকে আলোয়, কোনও শাস্তির তোয়াক্কা না করে মাথার হিজাব খুলে, লাঠির আগায় হিজাব বেঁধে হাওয়ায় উড়িয়েছে । তারা যা বলতে চায়, তা হলো, যারা হিজাব পরে পরুক, কিন্তু আমরা পরতে চাইনা। আমরা হিজাব না পরার অধিকার চাই। হিজাব যেহেতু ধর্মীয় পোশাক, ধর্ম যেহেতু যার যার ব্যক্তিগত, তাই হিজাবকে ব্যক্তিগত ইচ্ছে অনিচ্ছের মধ্যে রাখাটাই যৌক্তিক।

মেয়েদের শরীরে হিজাব, নিকাব, বোরখা, আবায়া, ওড়না– নানা কিছু পরার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। রাষ্ট্র চাপ দেয়, নয়তো পরিবার দেয়, আত্মীয় স্বজন দেয়, পড়শি দেয়, নয়তো সমাজ দেয়। অধিকাংশ মেয়েই চাপের কাছে নতি স্বীকার করে। আমার ব্যক্তিগত মত — চাপ বন্ধ হোক, শাস্তি বন্ধ হোক, মগজ ধোলাই বন্ধ হোক, পোশাক পরার ব্যাপারে মেয়েদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হোক। ইস্কুলে, কলেজে, পুলিশে, আর্মিতে, অফিসে, আদালতে যদি ইউনিফর্মের ব্যবস্থা থাকে, সে তো পুরুষ-নারী সবাইকেই মেনে চলতে হয়। কিন্তু তা ছাড়া ব্যক্তিগত জীবনে মেয়েদের পোশাক নিয়ে বেশি মাথা ঘামায় রক্ষণশীল পুরুষেরা, মোল্লা কাঠমোল্লারা। মেয়েদের পোশাক পছন্দ করার দায়িত্ব মেয়েদেরই দেওয়া হোক।

অনেক মেয়েই ধর্মীয় কারণে হিজাব পরতে ইচ্ছুক, তাদের হিজাব পরতে বাধা দিলে যেমন হিজাবি মেয়ের পাশে অসংখ্য মানুষ দাঁড়ায়, তেমনি যে মেয়েরা হিজাব পরতে অনিচ্ছুক, তাদের হিজাব না-পরায় বাধা দিলে মানুষ হিজাবে অনিচ্ছুক মেয়ের পাশে তেমন দাঁড়ায় না। এখানেই চরম বৈষম্য।

বিশ্ব হিজাব দিবসের শুরু কোনও মুসলিম দেশে নয়, বরং খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠদের দেশে, আমেরিকায়। আমেরিকায় হিজাবের বিরুদ্ধে কোনও আইন নেই , হিজাবি মেয়েদের হেনস্থা করার কোনও সামাজিক নীতিও নেই। আমেরিকা ইউরোপের রাস্তায় হিজাবের পক্ষে আন্দোলন করার অনুমতিও প্রতিবছর মুসলমানরা বিধর্মী সরকারের কাছ থেকে পাচ্ছে। বিশ্ব হিজাব দিবস যারা পালন করছে, তাদের মূল উদ্দেশ্য ধর্ম নয়, মূল উদ্দেশ্য রাজনীতি। ধর্ম যখন রাজনীতি হয়ে ওঠে, তখনই ধর্মের সব গুণাবলি নষ্ট হয়ে যায়। তখন ধর্ম আর ব্যক্তিগত বিশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, তখন ধর্ম হয়ে ওঠে রাজ্য দখলের, ক্ষমতা জয়ের, অন্যের অধিকার হননের, অন্যের মুন্ডু কতলের হাতিয়ার। ধর্মকে ধর্ম হিসেবেই থাকতে দেওয়া হোক, রাজনীতিতে যেন এর রূপান্তর না হয়। আমরা তো ইতিমধ্যেই দেখেছি জামাতে -ইসলামি, ইস্লামিক স্টেট, বজরং দল, বা শিব-সেনাদের অগণতান্ত্রিক এবং অমানবিক কীর্তিকলাপ।

এ কথা সকলেই জানি যে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রে ইসলামি পোশাক পরার জন্য, মানুষকে, বিশেষ করে মেয়েদের, চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু অবাক হই যখন দেখি বাংলাদেশের মতো গণপ্রজাতন্ত্রীতেও চলে সেই চাপ। সম্প্রতি ইস্কুলের পাঠ্যবইয়ে সালোয়ার কামিজ আর ওড়না পরা এক মেয়ের ছবি ছাপিয়ে লেখা হয়েছে, মেয়েদের জন্য উপযুক্ত পোশাক। ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে এই বলে, মেয়েদের শরীরে শারীরিক পরিবর্তনের কারণে মেয়েরা ঝুঁকে হাঁটে, তাই ওড়না পরে হাঁটলে সোজা হয়ে হাঁটতে পারবে। এরপর পাঠ্য বইয়ে হয়তো বোরখা পরা মেয়ের ছবির নিচে লেখা হবে, মেয়েদের উপযুক্ত পোশাক। বোরখা পরার পক্ষেও নানা রকম যুক্তি খাড়া করা হবে।

আমার প্রশ্ন হলো, শরীরের পরিবর্তন হলে সেটা নিয়ে লজ্জা পেতে হবে কেন? সেটাকে বাড়তি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে কেন? সবাই তো এই পরিবর্তনের কথা জানেই। কৈশোর থেকে তারুণ্যের পথে যাওয়ার সময় ছেলেদের গলার স্বরের পরিবর্তন ঘটে, সেই পরিবর্তনটা কি ওরা কিছু দিয়ে ঢেকে রাখে? ছেলেদের মুখে বুকে লোম গজায়, কী দিয়ে ঢাকা হয় ওসব? তাহলে মেয়েদের ঋতুস্রাবের ঘটনা গোপন রাখতে হয় কেন, মেয়েদের স্তনের ওপর কাপড়ের ওপর কাপড় চড়াতে হয় কেন? কেউ যেন না দেখে? কেউ যেন না বোঝে স্তন বলে কোনও বস্তু আছে কাপড়ের আড়ালে? ওড়নার উপস্থিতিই আসলে বলে দেয়, আছে, কিছু আছে। মেয়েরা ওড়না পরার কারণ তাহলে কি এই নয় যে, পুরুষ খারাপ, মেয়েদের বুকের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে পুরুষ , পুরুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানে না, সভ্য কী করে হতে হয়, পুরুষ জানেনা? মানি বা না মানি, মেয়েরা ওড়না পরা মানেই কিন্তু পুরুষের অপমান। ওড়না না পরলে মেয়েদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে অসভ্য পুরুষ। কিছু লোক মনে করে, ঝাঁপিয়ে পড়বে। আসলে যারা ঝাঁপিয়ে পড়ার, তারা, মেয়েরা ওড়না পড়লেও ঝাঁপিয়ে পরে, না পড়লেও ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওড়না ওদের বাধা দিতে পারে না। ওদের মানসিকতার বদল করার জন্য ওড়না নয়, ওড়নার চেয়ে বড় কিছুর প্রয়োজন। সুশিক্ষার প্রয়োজন।

যতদিন মেয়েরা ওড়না পরবে, ততদিন মেয়েরা যে পুরুষদের বিশ্বাস করে না, পুরুষরা যে অসভ্য– তা প্রমাণ হবে। সমাধান হলো, মেয়েদের ওড়না পরা বন্ধ করতে হবে, পুরুষের অসভ্য হওয়া বন্ধ করতে হবে। স্তন যে চর্বি পিণ্ড, প্রাকৃতিক এবং স্বাভাবিক শারীরিক জিনিস — এ সম্বন্ধে ছেলে মেয়ে কেউ অজ্ঞ নয়। তাহলে এ জিনিস দেখতে এবং দেখাতে এত অসুবিধে কেন? মেয়েদের শরীর বলেই হয়তো অসুবিধে। পুরুষেরও স্তন আছে, সেই স্তনে যখন চর্বি জমে, তখন তো সেগুলোকে ঢেকে রাখতে বলা হয় না! পুরুষের শরীর বলেই হয়তো হয় না। ঘটে বুদ্ধি থাকলে যে কেউ বুঝবে, ওড়না পরা বা না- পরার ব্যবস্থা সম্পূর্ণই নারী পুরুষের মধ্যে যে একটা কৃত্রিম সামাজিক পার্থক্য তৈরি করা হয়েছে, তার কারণে।

পছন্দ মতো পোশাক পরার অধিকার মেয়েদের দেওয়া হয় না। অথচ পুরুষদের পোশাক নিয়ে কেউ কিন্তু আপত্তি করে না। তাদের যে পোশাক পরার ইচ্ছে, সে পোশাকই পরছে। শুধু মেয়েদের বেলায় চারদিকে অদৃশ্য নীতি-পুলিশ বসানো হয়েছে। এই বৈষম্য দূর না করলে সমতার সমাজ কী করে তৈরি হবে? পোশাক বিষয় নয়, পোশাক কিন্তু বিষয়ও। পোশাক দেখেই খানিকটা ঠাহর করা যায়, সমাজে মেয়েদের অবস্থান কোথায় ।

ইস্কুলের গার্হস্থ বিজ্ঞান বইয়েও দেখলাম জ্ঞান দেওয়া হয়েছে , মেয়েদের কী রঙের পোশাক পরা উচিত, কী রঙের পোশাক পরা উচিত নয়। মোটা মেয়েদের হাল্কা রঙের পোশাক পরতে হবে, তা না হলে তাদের আরো মোটা দেখাবে। তার মানে মোটা দেখানো খারাপ! মোটা মেয়েদের আত্মবিশ্বাস ধুলোয় লুটিয়ে দেওয়া হয়েছে! অস্টম শ্রেণীর মেয়েদের শরীর নিয়ে, শরীরের গঠন নিয়ে, ভালো দেখাচ্ছে নাকি মন্দ দেখাচ্ছে তা নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে ইস্কুলের বইয়ে। তার চেয়ে কি সমাজ এবং পরিবারের বৈষম্য এবং সমতা বিষয়ে মেয়েদের জ্ঞান দেওয়া জরুরি নয়? মেয়েদের মানসিক বিকাশে সাহায্য করা জরুরি নয়? চারিত্রিক বৈশিষ্ট উজ্জ্বলতর করার জন্য প্রেরণা দেওয়া জরুরি নয়?

ইস্কুলের ছেলেদের কি গার্হস্থ্য বিজ্ঞান পড়ানো হয়? মেয়েদের জন্য এই বিজ্ঞান যতটা জরুরি, তার চেয়ে আসলে বেশি জরুরি ছেলেদের জন্য। ঘর সংসার মেয়েদের কাজ, ছেলেদের আছে বাইরের জগত — এই ধারণা যে ভুল তা বারবার প্রমাণ হয়েছে। এই ধারণা মেয়েদের বিরুদ্ধে চিরকাল বৈষম্যই তৈরি করেছে। শতাব্দির পর শতাব্দি মেয়েদের ঘর-বন্দি রেখেছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। এই সমাজকে চ্যালেঞ্জ করে মেয়েরা আজ ঘরের বাইরে, দেখিয়ে দিয়েছে যে কাজ পুরুষেরা করতে পারে, সে কাজ মেয়েরাও পারে। মেয়েরাও হতে পারে সফল চিকিৎসক, প্রকৌশলী, পদার্থবিদ, বিজ্ঞানী, বৈমানিক, মহাকাশচারী, হতে পারে শিক্ষক, চিন্তক, শিল্পী, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, সমাজবিদ, হতে পারে শ্রমিক, ব্যবসায়ী, পুলিশ, মিলিটারি, মন্ত্রী, রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু পুরুষ এখনও দেখাতে পারেনি, মেয়েরা যা পারে, তারাও তা পারে, তারাও ঘর সংসারের কাজ করতে পারে, সন্তান লালন পালন করতে পারে। সে কারণেই বলছি, মেয়েদের গার্হস্থ্য বিজ্ঞান যতটা পড়া উচিত, তার চেয়ে বেশি পড়া উচিত ছেলেদের। এই বিজ্ঞান সম্পর্কে মেয়েদের জ্ঞান থাকলেও, ছেলেদের প্রায় নেই বললেই চলে। মনে রাখতে হবে, সভ্য হতে চাইলে বৈষম্যের সমাজ নয়, সমতার সমাজ গড়ে তুলতে হবে, নারী- পুরুষের সমানাধিকার যতদিন না হবে, ততদিন সমাজ আর যাই হোক, সভ্য হবে না।

Category: Bangla BlogsTag: হিজাব
Previous Post:इंसानियत पर दोहरा रवैया
Next Post:আমাদের অঞ্চল সভ্য নয়

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© 2023 · Taslima Nasrin · twitter · facebook · freethoughtblogs

Return to top