একদিন ঠিকই
আমি অপেক্ষা করবো তোমার, তুমি বাড়ি ফিরবে,
আমি তোমার জন্য চা করে দেবো,
স্নানঘরে ধোয়া তোয়ালে দেবো,
স্নান করে তুমি কী পরবে, দেবো,
তোমার চটি জোড়া এগিয়ে দেবো।
তুমি টয়লেটের সিট উঠিয়ে রাখলে নামিয়ে দেবো,
ফ্লাশ করতে ভুলে গেলে ফ্লাশ করবো,
খাবার টেবিলে সাজিয়ে দেবো তুমি যা যা খেতে পছন্দ করো।
তুমি খাবে, তোমার থালায় তুলে দিতে থাকবো আরও,
তুমি যত খাবে, তত আমার আনন্দ হবে।
তুমি খেতে খেতে বলবে আজ কী কী করলে, কোথায় কোথায় গেলে,
শুনে আমি ধন্য হতে থাকবো,
কারণ তুমি আমাকে আপন ভাবছো,
ভালোবাসছো বলেই তো ভাবছো।
আমি ধন্য হতে থাকবো
যখন তুমি আমাকে স্পর্শ করবে,
আমি ধন্য হতে থাকবো,
কারণ আর কোনও শরীর নয়,
আমার শরীরকে তুমি ভালোবাসছো,
ভালোবাসছো বলেই তো তুমি স্পর্শ করছো।
তোমার জ্বর হলে আমি হয়ে উঠবো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সেবিকা,
ডাক্তার ডেকে আনবো,
সারারাত জেগে থাকবো,
কপালে জলপট্টি দেবো, গা স্পঞ্জ করবো,
ঘড়ি দেখে ওষুধপথ্য খাওয়াবো।
আমার জ্বর হলে তুমি বলবে, সিজন চেঞ্জ হচ্ছে,
কাশি হলে বলবে, নিশ্চয়ই এলার্জি,
পেটে ব্যথা হলে বলবে, কী যে সব খাও তুমি!
পিঠে ব্যথা হলে বলবে, এ বয়সেই এসব?
হাঁটুতে ব্যথা হলে বলবে, রোগের আখড়া হয়েছো।
মাথায় যন্ত্রণা হলে বলবে, ও কিছু না, সেরে যাবে।
দু’একটা চুল পাকলেই বলবে, তোমার আসল বয়স কত বলো তো!
আমার শ্বাসকষ্ট হলে বলবে, নিজের দোষেই কিছু বাঁধিয়েছো! যত্তসব।
একদিন আমার পাহাড় ঘুরতে ইচ্ছে হবে,
তুমি বলবে, আমার সময় নেই যাওয়ার।
আমি বলবো, আমার আছে, আমি যাবো?
তুমি একা যেতে চাইছো?
হেসে বলবো, হ্যাঁ, একাই যাবো।
শুনে তুমি অট্টহাসি হাসবে,
বলবে, তুমি পাগল হয়েছো, আমাকে দেখবে কে?
আমার রান্না করবে কে? কে আমাকে খাবার দেবে?
আমার কাপড়চোপড় কে কাচবে, কে গুছিয়ে রাখবে?
কে আমার ঘর দোর বিছানাপত্র সাফ করবে?
কে বাড়ি পাহারা দেবে?
বাগানে জল দেবে কে?
আমি বলবো, তুমি।
তোমার চোখ কপালে উঠবে।
শুধরে নিয়ে বলবো, তোমার যে দাসি আছে, সে।
তুমি বলবে, দাসির হাতের রান্না আমার ভালো লাগে না।
তুমি যেভাবে আপন ভেবে সব করো, দাসি সেভাবে করে না।
আমি হাসবো,
আমার অন্তরে সুখের ফোয়ারা বইবে,
কারণ দাসির রান্নার চেয়ে আমার রান্নাকে ভালো বলেছো তুমি,
আমি যে দাসি নই, দাসির চেয়ে আলাদা,
এ সংসার যে দাসির নয়, এ সংসার যে আমার,
তা তুমি স্বীকার করেছো বলে আমার হৃদয় পেখম মেলে নাচবে।
একদিন আমি একা একা সমুদ্র দেখতে যাবো বলে সুটকেস গোছাবো।
দেখে তুমি আমার ওপর হায়েনা যেমন হরিণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে,
তেমন ঝাঁপিয়ে পড়বে।
আমাকে ছিঁড়তে থাকবে।
রক্তাক্ত করতে থাকবে।
রক্ত দেখে স্বজন পড়শি বলবে যে এ রক্ত নয়,
এ তোমার ভালোবাসার চিহ্ন,
বলবে আমাকে ভালোবাসো বলেই আমাকে চাইছো তুমি,
আমাকে ছাড়া দু’দণ্ড বাঁচো না বলেই আমাকে চাইছো।
আমি চোখের জল মুছে হাসবো,
তোমার পছন্দের রসমালাই বানাতে রান্নাঘরে ঢুকবো।
একদিন আমি চা করে দেবো না,
চটিজোড়া এগিয়ে দেবো না,
তোমার টয়লেট ফ্লাশ করবো না,
তোমার পছন্দের খাবার রান্না করবো না,
একদিন তোমার অসুখ হলে আমি আর সারারাত জাগবো না
আমি অসুস্থ হলে ডাক্তার ডাকবো,
ঘড়ি দেখে ওষুধপথ্য খাবো,
একদিন শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে ঘন ঘন সময় কাটাবো।
একদিন ঠিকই পাহাড় দেখতে ইচ্ছে হলে পাহাড় দেখে আসবো,
সমুদ্রে স্নান করতে ইচ্ছে হলে সমুদ্রে স্নান করে আসবো।
Leave a Reply